Saturday 20 June 2015

হুমায়ূন আহমেদ, জাফর ইকবাল, আহসান হাবীব ও বাংলা কথাসাহিত্যে জনপ্রিয় নবধারার উৎস-পরুষ ফয়জুর রহমান আহমেদ / ড. মোহাম্মদ আমীন

ফয়জুর রহমান আহমেদ : বাংলা কথাসাহিত্যে জনপ্রিয় নবধারার উৎসপুরুষ

পুলিশ অফিসার, কথাসাহিত্যিক ও বাংলা কথাসাহিত্যে জনপ্রিয় নবধারার উৎস-পুরুষ ফয়জুর রহমান আহমেদ ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর স্ত্রীর নাম আয়েশা আখতার খাতুন। ফয়জুর রহমান হচ্ছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ ও মুহম্মদ জাফর ইকবালের পিতা। হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮
ফয়জুর রহমান আহমেদ
খ্রিস্টাব্দের ১৩ নভেম্বর তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্গত নেত্রকোণা মহকুমার (বর্তমানে জেলা) কেন্দুয়ার কুতুবপুর গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০১২ খ্রিস্টাব্দের ১৯ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পুলিশ বিভাগের অনেকে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে নানাভাবে অবদান রেখেছেন। তবে ফয়জুর রহমানের অবদান যেমন সুদূরপ্রসারী ছিল তেমনি পরবর্তীকালে তা অত্যন্ত কার্যকর প্রতীয়মান হয়েছেন। তিনি সাহিত্যকর্মে জড়িত থাকলেও তেমন বিস্তৃতি পরিসরে যাওয়ার আগে শহীদ হন। কিন্তু তিনি তাঁর সন্তানদের যেভাবে গড়ে তুলেছেন এবং সন্তানগণ যেভাবে গড়ে উঠেছেন তা পরবর্তীকালে বাংলা সাহিত্য সম্ভারে এনে দিয়েছে নতুন এক জনপ্রিয় ধারা।

পুলিশ অফিসার ফয়জুর রহমান আহমেদ ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পিরোজপুর মহকুমার এসডিপিও হিসাবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ৫ মে পাকিস্তানি হানাদারেরা পিরোজপুরের মহকুমা পুলিশের প্রধান ফয়জুর রহমান আহমেদকে হত্যা করে। হত্যার পর তার লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। পরে গ্রামবাসীর উদ্যোগে তাঁর মৃতদেহ নদী থেকে উদ্ধার করে দাফন করা হয়। অনেকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ফয়জুর রহমান আহমেদ পিরোজপুর মহকুমায় বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকা-েও তিনি প্রচুর সময় ব্যয় করতেন। মূলত তাঁকে হত্যা করার বিষয়ে হানাদার বাহিনীর এটি অন্যতম কারণ ছিল। হুমায়ূন আহমেদ জনপ্রিয় হওয়ার পূর্ব-পর্যন্ত দীর্ঘদিন ফয়জুর রহমানের কবর নিয়ে তেমন কেউ মাথা ঘামায়নি। ২০০৯ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে বহু বছর পর মুহম্মদ জাফর ইকবাল তাঁর বাবার কবর দেখতে যান। এরপর তাঁর কবর ব্যাপকভাবে জনসমক্ষে আসে।
হুমায়ূন আহমেদ

ফয়জুর রহমান আহদে ও তাঁর মা আয়েশা ফয়েজ দুজনেই ছিলেন সাহিত্যিক। পারিবারিক পরিম-লে সাহিত্য-সংস্কৃতি-
চর্চার অনুকূল আবহে তঁঅর সন্তানগণের  শৈশব জীবন অতিবাহিত হয়। ফয়জুর রহমানের সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল। তিনি সমকালীন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন। বগুড়ায় অবস্থানকালে ‘দীপ নেভা যার ঘরে’ নামের একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এ গ্রন্থে তিনি তাঁর স্বদেশ ভাবনা ও আর্থসামাজিক বিষয়গুলো দার্শনিক নান্দনিকতায় তুলে ধরেছেন।

ফয়জুর রহমান আহমেদ নিজে সাহিত্য সৃষ্টির পাশাপাশি সন্তানদের সাহিত্যচর্চায় জন্য উৎসাহ দিতেন। তাঁর প্রথম সন্তান হুমায়ূন আহমেদ, দি¦তীয় সন্তান মুহম্মদ জাফর ইকবাল একজন কথাসাহিত্যিক এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং কনিষ্ঠ সন্তান আহসান হাবীব খ্যাতিমান রম্যলেখক ও কার্টুন ম্যাগাজিন ‘উন্মাদ’-এর সম্পাদক। তাঁদের মা আয়েশা ফয়েজও লেখালেখি করতেন।  ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে ‘জীবন  যে রকম’
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
নামে তাঁর একটি আত্মজীবনমূলক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ফয়জুর রহমানের ঐকান্তিক পরিচর্যা ও আগ্রহ তিন ভাইকে লেখার জগতেই শুধু আনেননি, স্থায়ীই করে দিয়েছেন চিরকালের কোলে সাহিত্যের নির্মেঘ মহিমায়। পুলিশ অফিসার পিতার পৃষ্ঠপোষকতা ও উৎসাহ না-থাকলে হয়তো বাংলা সাহিত্য এ তিনরত্নের বিরল সাহিত্যকর্ম হতে বঞ্চিত হতো- এমনটি বলা অযৌক্তিক হবে না। এ হিসাবে তাঁকে বাংলা সাহিত্যে নবধারার প্রতিষ্ঠাতা তিন দিকপালের স্রষ্টা বলা যায়। ফয়জুর রহমান আহমেদের এ ভূমিকা ও অবদান বঙ্কিমচন্দ্র চেট্টোপাধ্যায়ের পিতা যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তুলনীয়।
আহসান হাবীব
পিরোজপুর মহকুমায় চাকরিকালীন ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ৫ মে একজন লোক এসে এসডিপি ফয়জুর রহমান আহমেদকে স্থানীয় মিলিটারি ক্যাম্পে যাওয়ার জন্য
বলে।  তিনি সরল বিশ্বাসে মিলিটারি ক্যাম্পে যান। এরপর তাঁকে আর কেউ
জীবিত দেখেননি। পাকিস্তানি বাহিনী তাঁকে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়। পিরোজপুরেই  শহিদ ফয়জুর রহমান আহমেদকে দাফন করা হয়। তাঁর সমাধি ফলকে লেখা আছে :
‘নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে
রয়েছ নয়নে নয়নে’
ফয়জুর রহমান আহমেদ
(মহকুমা পুলিশ প্রধান)

No comments:

Post a Comment