Saturday, 23 January 2016

বাংলা বানানে ড. মোহাম্মদ আমীনের অবদান / সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

বাংলাদেশের যোগাযোগ মন্ত্রী ও শিক্ষানুরাগী সৈয়দ আবুল হোসেনকে নিয়ে প্রকাশনীয় ‘সময়ের পরশ পাথর’ গ্রন্থের জন্য আমার একটা লেখা সংগ্রহ উপলক্ষ্যে ড. মোহাম্মদ আমীনের সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটে। ড. আমীন যখন আমাকে ই-মেইল করেন তখন আমি লন্ডনে। ই-মেইলের শেষাংশ ছিল : “স্যার, সৈয়দ আবুল হোসেনের জন্য লেখা শেষ হলে আমার জন্যও দুকলম লিখবেন।” সহজ-সরল প্রকাশ, বেশ দাগ কাটে মনে। 
জনাব আমীনই ‘সময়ের পরশ পাথর’ বইটির সম্পাদনা করছেন। সম্পাদকের অভিজ্ঞতা জানার আগ্রহ প্রকাশ করলে জনাব আমীন তাঁর লেখা কয়েকটি বই পাঠান। ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, ভুগোল, বৈশ্বিকভাবনা, জীবনী, প্রবন্ধ, রম্যরচনা, উপন্যাস, ছোটগল্প, গবেষণা, বাংলা বানান, প্রশাসন, বাংলা সাহিত্য, আইন, আন্তর্জাতিক বিষয়, শিশুতোষগ্রন্থ, দর্শন, সম্পাদনা, ব্যাকরণ, অভিধান, ব্লগ, সমাজজীবন- সবক্ষেত্রে দেখি সরব পদচারণা? গানও লিখেছেন, ছড়াও লিখেছেন, কবিতাও দেখলা কয়েকটি। একটা পত্রিকাও ছাত্রজীবনে সম্পাদনা করেছেন। 
তাঁর লেখা আমার কাছে অতুলনীয় মনে হয়েছে। ‘সময়ের পরশ পাথর’ গ্রন্থের জন্য লেখা দিতে গিয়ে ড. মোহাম্মদ আমীনের প্রোফাইল ও জীবনী প্রথমে একটু ধাক্কা দিয়েছিল বই কি। প্রশাসনে চাকুরি করেন- এমন লোকদের মধ্যে এরূপ বহুমুখী প্রতিভা এখন দেখা যায় না বললেই চলে। তাঁর পাঠনো বইগুলো ভালো লাগল। তিনি নিজের মতো করে লিখেছেন। কাউকে অনুসরণ বা অনুকরণ করেননি। বিশেষ করে, তাঁর ইতিহাসগ্রন্থসমূহ উচ্চপ্রশংসার দাবি রাখে। অতীতের প্রতিটি ঘটনা যেন অন্তমূল থেকে তোলে আনা নিজের চোখে প্রত্যক্ষ কোনো প্রত্যয়। যা, যে কাউকে নস্টালজিয়ায় নিয়ে যেতে পারে।তাঁর আর একটা বিষয় আমাকে মুগ্ধ করেছে, সেটি - বাংলা বানান নিয়ে গবেষণা। তিনি বিজ্ঞানের ছাত্র, অথচ বাংলা বানানে তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য আমি সমীহ ও শ্রদ্ধার সঙ্গে নিয়েছি। বানান নিয়ে ড. মোহাম্মদ আমীনের শ্রম, মেধা ও বিচক্ষণতার ঋণ বাংলাভাষী কোনোদিন ভুলতে পারবেন না। আমি কিছুদিন আগে, বাংলা ভাষার স্বকীয়তা অচিরে হারিয়ে যাবে বলে যে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলাম, ড. আমীনের বাংলা বানান-বিষয়ক কার্যক্রম দেখে তা দূর হয়েছে। আমি এখন শান্তিতে মরতে পারব। আমার বাংলা আমীনদের মতো লোকদের জন্য অনন্তকাল বেঁচে থাকবে। লন্ডন থেকে ফিরে আসার পর তাঁকে নিয়ে আরও বিস্তারিত লেখার আশা রইল। ততক্ষণ পর্যন্ত ভালো থেকে আমীন। 
                             ১৪ জুন, ২০১২
        সংগ্রহে : আল মাহমুদ চৌধুরী।

No comments:

Post a Comment